মহাবিশ্বের বিশালতাঃ এক অসীম রহস্য!

মহাবিশ্বের


মহাবিশ্বের পরিচিতি

মহাবিশ্ব, মহাকাশ বা মহাশূন্য কথাটির ইংরেজি হচ্ছে Space। স্পেস হল ফাঁকা জায়গা। একেবারে মহাফাঁকা জায়গা, আমাদের এই মহাবিশ্ব।

আমরা সবাই জানি যে এটা অনেক বড়। কিন্তু আসলে যে কত বড় সেটা আমাদের সাধারণ জ্ঞানে আমরা বুঝতে পারি না। বিষয়টা অনেকটা ওই কূপের ব্যাঙের মত। যে কখনো কূপের বাইরেই যায়নি। কাজেই সমুদ্র যে কূপের চেয়ে কত বিশাল সেই ধারণাটা তার নেই। আমাদের এই সীমিত জ্ঞানেই মহাবিশ্বের বিশালতার ব্যাপারে একটা ধারণা পাবার চেষ্টা করব।

মহাবিশ্বের বৈশিষ্ট্য

এর আগে সাধারণ কিছু বিষয় জেনে নেই। মহাশূন্য হল সীমাহীন ফাঁকা জায়গা।
এর কোন কেন্দ্র নেই। এর কোন সীমানা নেই। নেই কোন উত্তর দক্ষিণ, নেই কোন ডান বাম, নেই কোন উপর নিচ। সীমাহীন ফাঁকা জায়গা।
মহাশূন্যে পুঞ্জীভূত গ্যালাক্সি ভেসে বেড়াচ্ছে। মহাশূন্য যেহেতু সীমাহীন সেহেতু এই গ্যালাক্সির সংখ্যাও সীমাহীন।

মহাবিশ্বের
সৌরজগতে আমাদের পৃথিবীর অবস্থান

গ্যালাক্সি: তারকার সমাহার।

গ্যালাক্সি হল অগণিত তারকা (তারা বা নক্ষত্র) এর সমাহার। গ্যালাক্সি দেখতে কিছুটা কয়েল এর মত।
সর্বদাই ঘুরছে। একটি গ্যালাক্সির তারকার সংখ্যা অগণিত হলেও অসীম নয়।
গ্যালাক্সি বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। একটি সমুদ্র সৈকতে যতগুলি বালুকণা থাকে, বলা যায় ছোট একটা গ্যালাক্সিতে ততগুলো তারকা থাকে।
গ্যালাক্সি নিজেই সব তারকাকে সাথে নিয়ে ঘুরছে। তারকাদের চারদিকে ার গ্রহ ঘুরছে।
গ্রহের চারদিকে ঘুরছে উপগ্রহ। সূর্য এমন এক তারকা, আমাদের পৃথিবী এমন এক গ্রহ আর চাঁদ এমন এক উপগ্রহ।

আলোকবর্ষ: মহাকাশের দূরত্ব মাপার একক।

মহাবিশ্বের আকার অনেক বড় হওয়াতে এখানে দূরত্ব পরিমাপ করা হয় আলোকবর্ষ হিসাবে।
আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার যায়। এভাবে চলে এক বছরে আলো যতখানি দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে আলোকবর্ষ বলে।

মহাবিশ্বের
আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েতে আমাদের সৌরজগতের অবস্থান

আনুমানিক হিসাবে সেই দূরত্বটা দাঁড়ায় ৯,৫০,০০,০০,০০,০০০ কিমি অর্থাৎ ৯৫ লক্ষ কোটি কিলোমিটার।
পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী যে প্লেনে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যাওয়া যায় সেই প্লেনে ওই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগবে ১০ লক্ষ ৮৪ হাজার বছর।
একই দূরত্ব অতিক্রম করতে আলোর সময় লাগবে মাত্র এক বছর। একে আলোকবর্ষ বলে। এটা সময়ের নয়, দূরত্বের একক।

মহাবিশ্বের একটি ছোট মডেল।

আগেই বলেছি, কোন কিছুর বিশালতা আমাদের সীমিত জ্ঞানে বোঝাটা কষ্টকর।
উপরের প্যারাতেই দেখুন। আমি যখন ৯৫ লক্ষ কোটি কিলোমিটারের কথা বলেছি তখন আপনি বুঝেছেন যে এটা অনেক অনেক বড় দূরত্ব। কিন্তু এটা যে কত বড় সেটা আরো ভালোভাবে আন্দাজ করতে পেরেছেন যখন বলেছি যে প্লেনে চড়ে ওটুকু দূরত্ব যেতে ১০ লক্ষ বছরের বেশি লাগবে।
এজন্য, মহাবিশ্বের বিশালতা বোঝার জন্য আমরা যদি একটি মডেল বানাই তালে বষয়টা আরো ভালো বুঝব।

মহাবিশ্বের
মহাকাশে গ্যালাক্সি যেভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে

যেমন, খেলনা অনেক গাড়ি আছে যেগুলো দেখতে হুবহু সত্যিকারের গাড়ির মত। শুধু আকারে ছোট। এর দরজা খোলা যায়, ভেতরে সিট আছে, চাকা, লাইট, কাচ কি নেই ওতে। কিন্তু সবকিছুই আকারে ছোট। এর সবকিছুই কিন্তু আকারে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গাড়ি যেমন ছোট এর চাকা বা সিটও তেমন ছোট। ঠিক এভাবে আমরা যদি মহাবিশ্বের ছোট একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ মডেল বানাই তবে মহাবিশ্বের আকার সম্পর্কে আরেকটু স্বচ্ছ ধারণা হবে।

মডেলের বিবরণ।

আমাদের বানানো এই মহাবিশ্বের মডেলটি হবে খুবই ছোট। এই মডেলটিতে একে একে চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা সব বানাবো। ধরুন এই মডেলের মধ্যে পৃথিবীটি হবে একটা গলফ বল বা পিং পং (টেবিল টেনিস) বলের সমান। এই বলটি পৃথিবীর হুবহু মডেল। এতে আনুপাতিক আকারের সাগর, পাহাড় নদীনালা, বন জঙ্গল, দালান কোঠা ইত্যাদি থাকবে। কিন্তু পৃথিবীর হিসাবে বলটি আসলে এত ছোট যে, হাতে নিয়ে এই বলটি দেখলে ওসব কিছুই নজরে পড়বে না। এর উপরে হাত বোলালেও বলটি সম্পূর্ণ মসৃণ মনে হবে।

চীনের প্রাচীর, আইফেল টাওয়ার, ইত্যাদি এতই ছোট যে সেগুলো আপনার হাতেও অনুভূত হবে না, চোখেও দেখা যাবে না। একমাত্র হিমালয় পর্বত এর এলাকাটা একটু অমসৃণ মনে হবে। এবার শীতের সকালে ওই বলটির উপরে মুখ দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ুন। দেখবেন বলটির উপরিভাগ কেমন একটু ভেজা মনে হচ্ছে। এই ভেজাটিই হবে ওই মডেল পৃথিবীর সকল মহাসাগর। হয়ত আজগুবি মনে হচ্ছে। তবে টুকু নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের এই মডেলটি আসলে খুব ছোট। এটি এতই ছোট যে পৃথিবীর মডেলের উপরের জিনিস কিছুই চোখে দেখা যাচ্ছে না।

মহাবিশ্বের
সুপারনোভা – তারকা বিস্ফোরন
মডেলে অন্যান্য গ্রহ ও তারকা

এবার এই মডেলে চাঁদ, সূর্য অন্যান্য তারকা ইত্যাদি আনুপাতিক আকারে ও দূরত্বে বসাই। চাঁদ হবে মটরশুটির দানার মতন সাইজের। এটি থাকবে (গলফ বল) পৃথিবী থেকে ১১০ মিটার দূরে। সূর্য হবে একটি টেনিস কোর্ট সাইজের আর এটি থাকবে ৩৭ কিলোমিটার দূরে। এভাবে বিভিন্ন দূরত্বে অন্যান্য গ্রহগুলো থাকবে।

সবচেয়ে দূরের গ্রহ প্লুটো থাকবে ১৮৫০ কিলোমিটার দূরে। তার মানে ছোট এই সৌরজগতের মডেলটির আকার হবে ভারতের সাইজের। এবার এই মডেলে তারকা বসানো শুরু করি। সবচেয়ে কাছের তারাটা কোথায় বসাতে হবে বলে আপনার ধারণা? দুবাইতে, জাপানে নাকি আমেরিকায়? এটা আসলে আপনার ধারণারও বাইরে যাবে। এই মডেলের সবচেয়ে কাছের তারাটিকে (নামঃ আলফা সেঞ্চুরাই) বসাতে হবে চাঁদে। আর দূরের তারার কথা তো চিন্তারই বাইরে। কোন তারা হয়ত শনি গ্রহে বসানো লাগবে। কোন তারা হয়ত সৌরজগতের বাইরে বসাতে হবে।


মহাবিশ্বের মডেলটি এত ছোট যেখানে পৃথিবীকে একটা গলফ বলের সাইজের বানানো হয়েছে ও চাদকে বানানো হয়েছে মটরশুটির দানা। সেই মডেলেই সৌরজগত হবে ভারতের চেয়ে বড়। সেই মডেলে আমাদের গ্যালাক্সিটি (মিল্কিওয়ে) হবে সৌরজগতের চেয়ে বড়। এত ছোট একটি মডেলে, একটি গ্যালাক্সি যদি সৌরজগতের চেয়ে বড় হয় তবে সীমাহীন সংখক গ্যালাক্সি সম্বলিত এই মহাবিশ্বের ওই ছোট মডেলটিও এঁকটি মহাবিশ্বের মতনই বড় হবে। এর থেকে মহাশুন্যের বিশালতার একটি ধারনা পাওয়া যায়।

মহাশূন্যের বিশালতা বোঝার আরেকটি উপায়।

উপরের কথাগুলো বুঝে কঠিন হলে সহজ আরেকটি দ্ধতি আছে।
আপনারা সবাই পরমানু চেনেন। পরমানু এত ছোট যে একটি সুইয়ের আগাতে ২০০টি সাজিয়ে রাখা যায়।
আমাদের সৌরজগতের তুলনায় একটি পরমানুর যত ছোট। আমাদের গ্যালাক্সির তুলনায় পৃথিবী ঠিক তত ছোট।
এমনই সীমাহীন সংখক গ্যালাক্সি নিয়েই আমাদের মহাশুন্য।

তারাদের দূরত্ব ও যোগাযোগের সমস্যা।

আমাদের সবচেয়ে কছের তারাটি সাড়ে চার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
যদিও সম্ভব নয় তবুও বোঝানোর জন্য বলছি। ওই তারার কোন গ্রহে যদি মানুষ বসতি স্থাপন করতে পারে তবে পৃথিবীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হবে এরকম- টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা অনুস্টানটি সাড়ে চার বছর পরে দেখা যাবে।
মোবাইলে কারোর সঙ্গে কথা বললে “হ্যালো, কেমন আছো” বলার সাড়ে চার বছর পরে সে সেটি শুনতে পাবে।
সে আবার “আমি ভালো আছি” উত্তর দিলে আপনি সেটি আরো সাড়ে চার বছর পরে শুনতে পারবেন। অর্থাৎ হ্যালো বলতেই নয় বছর পার হয়ে যাবে।
এই হল, সবচেয়ে কাছের তারার অবস্থা। দুরের তারার কথা চিন্তা করতে, ভয় লাগে। 

সুপারনোভার বিশালতা

দুই লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে সুপারনোভা। যে এলাকা জুড়ে বিস্ফোরণ হয়েছে তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দূরত্ব ৩০ আলোকবর্ষ।

মহাবিশ্বের
দুই লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে সুপারনোভা। যে এলাকা জুড়ে বিস্ফোরন হয়েছে তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের দুরত্ব ৩০ আলোকবর্ষ

তাহলে দূরের তারা কি অবস্থা? তারা হল সূর্যের মতন, আগুনের গোলা। কোন তারা জ্বলে নিঃশেষ হবার আগে শেষ বারের মতন ধপ করে জ্বলে ওঠে। সৃষ্টি হয় বিশাল বিস্ফোরণ। একেই সুপারনোভা বলে। খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু আধুনিক দূরবীক্ষণ যন্ত্রে বা অন্য োন যন্ত্রে সুপারনোভা দেখা গেছে বা ন্ত্রে ধরা পড়েছে।

হিসেব করে পাওয়া গেছে যে সুপারনোভা হয়েছে যে তারাটিতে সেটি ৫ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। সেই তারা থেকে আলো আমাদের এখানে আসতে ৫ লক্ষ বছর সময় লাগে। এই আলো আসার পরেই তো জিনিসটা আমাদের যন্ত্রে ধরা পড়েছে। অর্থাৎ, ওই সুপারনোভা (বিস্ফোরণ) হয়েছে ৫ লক্ষ বছর আগে আর তা দেখা যাচ্ছে এখন। হতে পারে আজকে কোন সুপারনোভা হচ্ছে, যেটা দেখা যাবে লক্ষ বছর পরে।

পৃথিবীর বয়স ৪৫০ কোটি বছর। এমনও অনেক তারা আছে যেগুলো থেকে আলো আমাদের কাছে এখনো (৪৫০ কোটি বছরে) এসে পৌঁছেনি। এত অসীম আমাদের এই মহাবিশ্ব।

মহাবিশ্ব দেখতে কেমন

মহাবিশ্বের
মহাশুন্য দেখতে যেমন

একটা বিল্ডিং এর রুমের ভিতর দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকালে বিল্ডিংটি দেখতে কেমন সেটা বোঝা যায় না। বিল্ডিংটি দেখতে হলে কয়েক পা হেঁটে গেটের বাইরে গিয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে। ঠিক তেমনি মহাবিশ্বের আকৃতি দেখতে কেমন, সেটা দেখতে হলে আমাদেরকে যেখানে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। সেখানে আলোর গতিতে যেতে এক হাজার কোটি বছর লাগবে। ওখানে গেলে আমরা মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশকে উপরের ছবিটির মতন দেখতে পাব।

Related posts

ব্রণের দাগ কীভাবে প্রতিরোধ করবেন?

cw

Eid Celebration Fireworks Qatar: A Night to Remember

cw

Symbiosexuality কি জানেন ?

cw

Leave a Comment